পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ও স্বর্ণ ব্যবহার হারাম কেন?

সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য ইসলামসম্মত বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯১)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিপাটিবোধ ও শালীনতার ধর্ম ইসলাম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতাকে ইসলাম ধর্মে যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, পরিপাটি-তাকওয়ার পোশাক ও পরিমিত সাজসজ্জাকেও তেমন উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘হে আদাম সন্তান! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পোশাক দিয়েছি আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক। এটা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি; যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৬)

ইসলামি শরিয়তে বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা, পরিপাটি অবস্থা, বাহ্যিক সৌন্দর্যকে ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আত্মিক পরিচ্ছন্নতা, শুভ্রতা ও পরিশুদ্ধতাকেও ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তদুপরি পুরুষের জন্য দুই ধরনের সাজসজ্জাকে নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। তা হলো- ১. নিরেট স্বর্ণ বা অধিকাংশ স্বর্ণ বিশিষ্ট বস্তু ব্যবহার নিষিদ্ধ। ২. খাঁটি রেশম বা অধিকাংশ রেশমজাত পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ। (হালাল-হরামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ১৫২)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রেশমের কাপড় নিয়ে তার ডান হাতে রাখলেন আর স্বর্ণ নিয়ে বাম হাতে রাখলেন। এরপর বললেন, নিশ্চয়ই এই দুটি বস্তু আমার উম্মতের পুরুষের জন্য হারাম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯৩৫)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এক লোকের হাতে একটি স্বর্ণের আংটি দেখে তা খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে হাতে রাখে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৯০; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৫)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৬৪)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি স্বর্ণের আংটি পড়লেন এবং তা খুলে ফেলে দিয়ে বললেন, কখনওই এটি পরিধান করো না। এ কথা শুনে সব সাহাবি তাদের স্বর্ণের আংটি খুলে ফেলে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৬৭)

তবে প্রয়োজনে কারও যদি নাক কেটে যায় অথবা দাঁত ভেঙে যায় এবং তা মেরামতের জন্য স্বর্ণের বিকল্প কিছু না থাকে; তাহলে এমন ক্ষেত্রে বা পরিস্থিতিতে পুরুষরা প্রয়োজন পরিমাণ স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনওভাবেই সেটা যেন অপচয় বা বিলাসিতা না হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৭০; আল-মাজমু, ইমাম নববী, ১/৩১২; বাদায়েউস সানায়ে, ৪/৩১৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ২৪/৫৬)

নিরেট স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা যেমন নিষিদ্ধ; তেমন স্বর্ণের কলম, ঘড়ি, মোবাইল কভার ও তৈজসপত্রসহ শখ ও বিলাসিতা-বশত ব্যবহার্য বস্তুর ব্যবহারও হারাম। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ১৫৩)

উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক স্বর্ণ বা রৌপ্য দ্বারা নির্মিত বাসনে (তৈজসপত্র) পান করে; সে শুধু তার পেটে জাহান্নামের অগ্নি প্রবেশ করায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫২৮১)

ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রেশমের পোশাক পরিধান করো না। কারণ দুনিয়াতে যে এটি পড়বে, আখিরাতে সে এটি আর পড়তে পারবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৬৯; মুসান্নাফে ইবনি আবি শাইবা, হাদিস : ২৪৬৫৮)

রেশমের পোশাক সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘এটি (রেশমের পোশাক) হলো তাদের পোশাক, আখিরাতে যাদের কোনও অংশ নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৪১; মুসলিম, হাদিস : ২০৬৮)

তবে স্বাস্থ্যগত বিশেষ প্রয়োজনে রেশমের কাপড় পড়া বা ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ও যুবাইর (রা.)-এর শরীরে চুলকানি থাকায় রাসুলুল্লাহ (সা.) রেশমি কাপড়ের জামা পড়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২৯১৯; মুসলিম, হাদিস : ২০৭৬)

এই দুটি বস্তু পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার নেপথ্যে সুউচ্চ চারিত্রিক ও নৈতিক শিক্ষার অবদান রয়েছে। কারণ মেয়েলি স্বভাব ও দুর্বলতা থেকে পুরুষের মুক্ত থাকা জরুরি। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এ ছাড়া বিলাসিতা প্রবণতা থেকে দূরে থাকা এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় রেখে এ দুটি বস্তুকে পুরুষের জন্য হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। (হালাল-হরামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ১৫৭)

লেখক- মিরাজ রহমান : আলেম ও গবেষক

চাঁপাইবার্তা/কেকে।।