১৯৭২ সালের ১৯ মে

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি

চলতি বছরের এপ্রিলে যে কয়দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে শুরু করে আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের কোথাও না কোথাও তাপপ্রবাহ চলমান। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে সবচেয়ে বেশি দিনের তাপপ্রবাহ চলছিল ২০২৩ সালে। সে সময় এপ্রিলের শেষ ১৮ দিন থেকে মে মাসের প্রথম ৫ দিন পর্যন্ত টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ চলেছিল। এবার দেশে প্রায় টানা তাপপ্রবাহ চলছে ২৭ দিন ধরে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৮ সালের পর এই ভূখণ্ডে এটাই সর্বোচ্চ টানা তাপপ্রবাহ। তবে এই ২৭ দিনের পুরো সময়টাতে সারা দেশের সর্বত্রই সমান হারে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়নি। তিনি বলেন, ৩১ মার্চ থেকে শুরু করে ১১ এপ্রিলের পর্যন্ত দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সে সময় তা খুব বেশি এলাকায় ছড়িয়ে যায়নি। এরপর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কয়েকটি অঞ্চলে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ এপ্রিল থেকে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়, ‍যা দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে টানা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর তিন দফায় হিট অ্যালার্ট বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে। সর্বশেষ হিট অ্যালার্ট আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত বহাল থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মাসের বাকি দিনগুলোতেও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে। ফলে যেকোনো বিবেচনায় এবার দেশের ইতিহাসে এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলার রেকর্ড তৈরি হয়েছে। চলতি এপ্রিলে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ পেরিয়ে গেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এপ্রিলজুড়েই তাপমাত্রা এমন থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে। গত বছর সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে। সে বছরের ১৭ এপ্রিল সেখানে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর আগের ৮ বছরে অতি তীব্র তাপমাত্রার রেকর্ড নেই।

তবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৭২ সালের ১৯ মে। সেদিন রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের যে কোনো মাসের চেয়ে এপ্রিল তুলনামূলক অনেক বেশি উষ্ণ ছিল। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে ৭ বার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এপ্রিল মাসে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫, ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি, ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি ও ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরপর ২০২২ সালে আবারও এপ্রিলের ১৫ তারিখে রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গত ২০ এপ্রিল জেলাটিতে তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের তীব্র গরমের কারণ ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের স্থানিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে সূর্যের কাছে থাকে, যে কারণে সূর্যের তাপ বেশি পড়ে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে সূর্য সাধারণত (কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর) একদম খাঁড়া অবস্থায় চলে আসে (বাংলাদেশও এই কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত)। সূর্য যত খাঁড়াভাবে আলো দেবে তত বেশি তাপ অনুভূত হবে। শাহীনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে পশ্চিমা বাতাস আসলে আর্দ্রতা (বাতাসে জলীয় বাষ্প) কমে যায়। অন্য দিকে দক্ষিণ-পশ্চিমা বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। ঢাকা ও খুলনার দিকে আর্দ্রতা কম থাকে। আর বেশি থাকে চট্টগ্রাম ও বরিশালের দিকে। দেশের ওপরের দিকে যত যাবে আর্দ্রতা কমে যাবে।

চাঁপাইবার্তা/এপি।।