আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’, ১৫ তারিখের মধ্যে হানতে পারে আঘাত

আগামী ১১ মে-র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে এই ঘর্নিঝড় সৃষ্টি হতে পারে এবং ১১ থেকে ১৫ মে-র মধ্যে তা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হলে এর নাম হবে ‘মোচা’। নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন মডেলের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, আগামী ১১ মে মধ্যরাতের পর থেকে ১৩ মে’র মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি মিয়ানমারের রাখাইন ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানলে বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ থাকতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। ঝড়টি ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কাও রয়েছে।

গত বছরের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় অশনি। প্রাথমিকভাবে এটি অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হলেও পরে গতিপথ পরিবর্তন করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অতিক্রম করে এই ঘূর্ণিঝড়।

চলতি মাসে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ছাড়াও এ মাসে ফের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে। এই মাসে রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যারও সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান জানান, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে নতুন করে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে এর নাম হবে ‘মোচা’।

তিনি বলেন, ‘পূর্বাভাস মডেলগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ৯ মে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেটি ১১ মে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এটির গতিপথ কী হবে তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের উপকূল দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে।’

এ মাসে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি থাকতে পারে জানিয়ে আজিজুর রহমান বলেন, এ মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে (খুলনা) একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) এবং দেশের অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরণের তাপ প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

গত মাসে (এপ্রিল) সারাদেশে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছিল। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করে। এতে জনজীবন চরম দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আরও জানান, এ মাসে দেশে ১ থেকে ৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র ও শিলা বৃষ্টিসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।

মে মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চল (রংপুর বিভাগ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট অঞ্চল) স্বল্প মেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ) বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ৮ থেকে ৯ মের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১০ মের মধ্যে গভীর নিম্নচাপ ও ১১ মে পুর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ মে মধ্যরাতের পরে থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, স্থলভাগে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড়টির খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

চাঁপাইবার্তা/জেকে।।